একটু ভেবে দেখবেন?

আপনার মতে পার্থক্য মানে নিকৃষ্ট, অসামাজিক, বেলেল্লাপনা, অপ্রাকৃতিক, অপরাধ, পাপ এবং আরও অনেক কিছু। তার মানে, কেউ যদি আপনার বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, জীবনযাপনের উপায়, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস বা অন্য কোনো জীবনযাত্রার সঙ্গে একমত না হয়, তাহলে তাদের এই ট্যাগগুলো না দিয়ে আপনি কখনই শান্তি পাবেন না। আপনার সবচেয়ে বড় বোকামি হল আপনি মনে করেন যে আপনার বিশ্বাস, পছন্দ, পছন্দ-অপছন্দের দ্বারা অন্য লোকেদেরও চলতে হবে। কিন্তু আপনার বিশ্বাস এবং পছন্দের ভিত্তিতে কেন অন্য একজন মানুষ হাঁটবে? একজন মানুষ যদি তার মতো ঘুরে বেড়ানোর জন্য খুশি হন এবং আপনার ক্ষতি না করেন, তাহলে ব্যক্তির জীবনে হস্তক্ষেপের কারণ কী? একবার ভেবে দেখুন।

কাউকে বাধ্য করার চেয়ে আপনি নিজের চিন্তা পরিবর্তন করতে পারেন। কিছু যৌন নাবালক আপনার মত সংকীর্ণ চিন্তার মানুষের কাছ থেকে ঘৃণা ও অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন। শুধু যৌন-অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষই নয়, এমনকি যারা তাদের সমর্থনে একটি শব্দও বলে, তাদের জন্য মোল্লা, পুরোহিত এবং আপনার মতো অন্যান্য সংকীর্ণ মানসিকতার লোকেরা তাদের প্রতি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে। আপনার মত অসভ্য মানুষের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করা যেমন নিম গাছ থেকে মিষ্টি আম আশা করা একই কথা। কিন্তু আপনিও চেষ্টা করতে পারেন বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে এবং সুস্থ চিন্তায় ফিরে আসতে। মিথ্যা শুদ্ধতা অর্জনের জন্য ঘৃণামূলক মন্তব্য, মৃত্যুর হুমকি এবং অপব্যবহার করার আগে আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে আপনার প্রিয় সন্তান, ভাই, বোন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আত্মীয়স্বজন এমনকি আপনার পিতা-মাতারাও একই যৌন মানসিকতার হতে পারে? আপনি কি কখনো তাদের অনুভূতি জানতে বা বোঝার চেষ্টা করেছেন, তাদের সুখ-দুঃখের কথা শোনার সময় কি কখনো পেয়েছেন? কেন এটা হবে? বরং, নিকৃষ্ট ভাষায় গালি দিয়ে, ভালোর মায়ায় তাদের প্রতি অপমান আপনাকে শুধু ধার্মিক করেছে কিন্তু মানবিক হতে দেয়নি। আপনি ধার্মিক হওয়ার জন্য অনেক অনুশীলন করেন, কিন্তু আপনি কি এর এক চতুর্থাংশ করেন সভ্য হওয়ার জন্য?

আপনি যদি মানবিক হতেন, তাহলে এই ধরনের নিকৃষ্ট ভাষায় গালিগালাজ, একজন আরেকজনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার চিন্তা ভাবতেন না। আপনি যখন আপনার ভাষায় কথা বলেন, তখন মনে হয় আপনি সারা জীবন গালি শিখতে কাটিয়েছেন এবং জিহাদের উপর পিএইচডি করেছেন। কিন্তু আমরা আপনার গালির জবাব গালি দিয়ে দিতে চাই না। হয়তো সে কারণেই আপনি ভাবছেন যে আপনার গালিগালাজ ভাষার ব্যাপারে কোনো সাড়া না পেয়ে আমরা হেরে গেছি। কিন্তু আপনার নিজের বিকৃত রুচির কথা তুলে ধরে আপনি আপনার নিজের চরিত্রের দুর্বলতা দেখান এবং বাস্তবে আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু তা বোঝার মতো জ্ঞান আপনার নেই। কারণ শৈশবে গ্রামের অশিক্ষিত মোল্লা পুরোহিতরা বিশ্বাসের ভাইরাস ঢুকিয়ে মস্তিষ্কের বোধশক্তি নষ্ট করে দিয়েছে।

কিছু মানুষের মস্তিষ্ক একে অপরের বিপরীত (একটি শ্লোক/চিহ্ন/মন্ত্র অন্য শ্লোক/চিহ্ন/মন্ত্রের বিপরীত)। পুরানো বইগুলি আপনার মাথায় অমানবিক ধারণা ঢুকিয়ে দিয়েছে যে “সমকামীরা অভিশপ্ত, তারা পাপী, তারা জাহান্নাম থেকে এসেছে, তারা মৃত্যুর অপরাধী ইত্যাদি।” এবং এই চিন্তাগুলিকে চূড়ান্ত জ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করে আপনি অযৌক্তিক মন্তব্য করতে শুরু করেন। কিন্তু আপনি যদি সঠিক কারণ খোঁজার চেষ্টা করতেন, তাহলে আপনি তাদের জন্যও একটি নিরাপদ বসবাসের পৃথিবী গড়ার কথা ভাবতেন।

বিভিন্ন দেব-দেবীর সেবা করেও ছোটখাটো ভুল হলে আপনি নরকের ভয় পান, কিন্তু যারা শত শত বছর ধরে পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয়ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, তারা আপনার দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাই একটু মানবিক হতে শিখুন। নিজেকে তাদের অবস্থানে রাখুন এবং একবার ভাবুন।